এবার টিভির লাইভ টকশোয় লাল-কালো-সবুজ রঙের শাড়ি পরেছিলেন নারী উপস্থাপক। উপস্থাপকের ওই শাড়ির রং দেখেই ক্ষেপে গেলেন টকশোর অতিথি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, শাড়ির রং ফিলিস্তিনের পতাকার সঙ্গে মিলে যাওয়ায় উপস্থাপককে নানাভাবে হেনস্থা করার চেষ্টা করেন তিনি।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক অভিযানের পর গাজায় নির্বিচার বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইল। যা তিন সপ্তাহ পরও অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে হাসপাতাল, স্কুল ও মসজিদও। এরই ধারাবাহিকতায় ১৭ অক্টোবর গাজার আল আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে নৃশংস হামলা চালা ইসরাইল।
যে হামলায় নারী ও শিশুসহ ৫০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। যার ফলে বিশ্বজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়ে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সরকার। ভয়াবহ ওই হামলার পরদিন তথা গত ১৮ অক্টোবর ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত পরিস্থিতি নিয়ে একটি টকশোর আয়োজন করে ভারতীয় টিভি চ্যানেল মিরর নাও।
এদিকে লাইভ টকশোটি পরিচালনা করছিলেন মিরর নাউয়ের নির্বাহী সম্পাদক ও উপস্থাপক শ্রেয়া ধুন্দিয়াল। এতে অতিথি হিসেবে অংশ নেন ফিলিস্তিনের এক আইন কমিটির চেয়ারম্যান হিবা হুসেইনি। তার বিপরীতে ছিলেন ইসরাইলের বিশেষ গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্য ফ্রেডারিক ল্যান্ডোস।
টকশোতে লাল পাড়ের সবুজ শাড়ি পরেছিলেন উপস্থাপক শ্রেয়া ধুন্দিয়াল। তার সঙ্গে পরেছিলেন কালো রঙের ব্লাউজ। যা ফিলিস্তিনের পতাকার রঙের সঙ্গে মিলে যায়। আর এতেই আপত্তি ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফ্রেডারিক ল্যান্ডোসের। শাড়ির রং দেখেই তিনি রীতিমতো ক্ষোভে ফেটে পড়েন।
লাইভ টকশোতেই ফ্রেডেরিক ল্যান্ডোস উপস্থাপকের শাড়ির রঙ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, ‘আমি দেখতে পাচ্ছি, আপনি আজ বিশেষ রঙের পোশাক পরেছেন। আপনাকে দেখেই ইচ্ছাকৃতভাবে আমিও নীল ও সাদা রঙের (ইসরাইলের পতাকার রং) পোশাক পরে এসেছি। কারণ আপনি সবুজ, কালো ও লাল রঙের শাড়ি পরেছেন। তবে আপনি যতই সবুজ, কালো ও লাল রঙের শাড়ি পরিধান করুন না কেন, নীল ও সাদা সবসময় ওপরেই থাকবে।’
তার এ কথার জবাবে শ্রেয়া ধুন্দিয়াল বলেন, ’রঙের সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি আরও বলেন, এটি তার প্রয়াত দাদির শাড়ি। আর তার দাদী চলমান ইসরাইল-হামাস সংঘর্ষ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তিনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তার বয়স আজ ১০৫ বছর হত।
তিনি আরও জানান, ’শাড়ির রঙ কোনোভাবে কোনো দলের প্রতি সমর্থন বোঝায় না। যদিও গাজায় চলমান সংঘাত ও ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে বোমা হামলায় ৫০০ জনের মৃত্যু একটি অপরাধ।’ উপস্থাপকে এই কথায় আরও চরম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা লান্ডোস। এমনকি তিনি উপস্থাপককে শাড়িটি অন্য কোনো অনুষ্ঠানে পরার পরামর্শ দেন। বলেন, ‘এটা অন্য কোনো অনুষ্ঠানে পরার জন্য তুলে রাখুন।’
অতিথির এমন অনধিকার চর্চা ও পরামর্শের জবাবে উপস্থাপক শ্রেয়া তার শান্ত গলাতেই বলেন, তিনি কী পোশাক পরবেন বা কী বলবেন তা বলে দেয়ার অধিকার তার (ইসরাইলি গোয়েন্দা) নেই। তিনি সেটাই বলবেন যা বলা উচিত এবং যা তিনি দেখছেন। এরপর ওই লাইভ টকশোর একটি ভিডিও ক্লিপ নিজের এক্স (টুইটার) অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেন শ্রেয়া। ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখেন ‘আমার প্রয়াত দাদির শাড়ি আমার আজকের অনুষ্ঠানের ইসরাইলি অতিথিকে হতাশ করেছে। আমার কোনো কিছু বলার ভাষা নেই।’
সেই ভিডিওটি পোস্টটি করার সঙ্গে রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়। কয়েকদিনেই ভিডিওটি ৪৯ লাখ ভিউ হয়েছে। কমেন্ট পড়েছে সাড়ে তিন হাজারের বেশি। এতে উপস্থাপক শ্রেয়াকেই সাধুবাদ জানিয়েছেন ব্যবহারকারীরা। অন্যদিকে সমালোচনার তীরে বিদ্ধ করেছেন টকশোর অতিথি ইসরাইলি গোয়েন্দা কর্মকর্তা ফ্রেডারিক ল্যান্ডোসকে।